Tuesday 24 July 2018

নারায়ণী

দিনবদলের স্বপ্ন দেখতেন নারায়ণী  । বাড়িটাকে তাই স্বপ্ন দিয়ে সাজিয়েছিলেন । মাধবীলতা, অশোক, রঙ্গন ও নারায়ণীর সম্মিলনে বাড়িটার "স্বপ্নকুটির" নাম উজ্জ্বল হয়ে মানুষের চোখ এড়িয়ে যেতে পারতো না। নারায়ণী স্বপ্নকুটির এখনও আছে । সূর্যাস্তের রেশ এখনও স্বপ্নকুটির নামটার উপর এসে পড়ে । মাধবীলতা অশোক রঙ্গন নারায়ণীর স্বপ্নের উপর পূর্ণচ্ছেদের রেখাটি টেনে দিয়েছে । নারায়ণী নেই । তবু স্বপ্নকুটিরে সূর্যাস্তের শেষ রশ্মির আভাস এখন ও চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না ।

Saturday 13 January 2018

জন্মদিনে

খুব সকালে ফোন করেছিল দিয়া। শুভেচ্ছা বার্তা। জন্মদিনের। প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম। জন্মদিন আজ আমার? মনে নেই। খুব খুশি হলাম। কেউ তো এটা মনে রেখেছে। দিয়া দিয়া ভালো থাকিস বোন। এই অকিঞ্চিৎকর মানুষটির কথা মনে রেখেছিস? রিটায়ার করেছি পাঁচ বছর হয়ে গেল। বয়েস বাড়ছে। গাছের মতো নির্বিকার হয়ে গেছি। তবু খুব ভালো লাগলো। ছোটবেলায় আমার জন্মদিন হতো। সব ভাইবোনদের জন্মদিন পালন করা হতো। আর আজকাল ওসব ভুলে যাই। খুশির বেলুন উড়লো চারপাশে ।তিন চারটে সেলফি তুলে ফেললাম। নিজেকে বললাম হ্যাপি বার্থডে। ছোটবেলায় জন্মদিনে  মা পায়েস করতো। পায়েস খাইয়ে আশীর্বাদ করা হতো। আজ দিয়া আসবে। রান্না করছি দিয়ার জন্যে। আজ সারাদিন ডুবে থাকবো গিরিজা দেবী আর বেগম আখতারে। আমার যত্নে পুরনো  রেকর্ড প্লেয়ারটি বেশ ভালো আছে। সূর্যাস্তের পর দিনের আলো পুরোপুরি নিভে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা মুখোমুখি বসে থাকবো। প্রেমগন্ধী হিমেল রোদ্দুর চারপাশে কেমন  মায়াময় হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আজ দিয়া আসছে। 

Thursday 28 December 2017

অন্তর্বৃত্ত

লোকটি দরজায় দাঁড়িয়ে। এলোমেলো চেহারা। খোঁচা খোঁচা সাদাকালো দাড়ির মিশেল, মলিন বেশ। খুব অসহায় দুটো চোখ। ভেতরে ডাকা হলে বলল, তার কিছু কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ায় খুব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। একটা ইস্কুল সার্টিফিকেট চাই। ১৯৬২ তে সে এই ইস্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়তো।
     এইসব বিপন্ন মানুষ সংখ্যায় বাড়ছে। অস্তিত্বের সংকট। লোকটা এখন কথা বলতে শুরু করল। অতীতে কোথায় ছিল বর্তমানে কোথায় আছে আর দরকারী কাগজপত্রের অভাবে কোথায় জায়গা হতে পারে এই আশঙ্কায় লোকটা কেঁদেই ফেলল হাউহাউ করে।
   এমনি কান্না কাঁদছিল আরেকটি লোক দিন তিনেক আগে। আবার কি ঠেলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে না কি ডিটেনশান ক্যাম্পে ঠাঁই হবে সেই আশঙ্কায় জেরবার।
   পথঘাট জুড়ে মানুষ যখন চলাচল করে তখন বিপন্ন মানুষেরা অনেকটা জায়গা হয়তো জুড়ে থাকে। উদাসীন পরিপার্শ্ব উদাসীন প্রকৃতির ভেতর নিরন্তর যুদ্ধে লিপ্ত মানুষের সামূহিক কষ্টের বিবরণ অদৃশ্য খাতায় জমে জমে পাহাড় হয়। কেউ জানে না, কেউ না।      লোকটা চোখের জল মুছে এখন চলে গেল। তার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত সময়ের  দোলাচলতা ভাসমান সময়ের শূন্যতায় আপাতত স্থগিত হয়ে রইল। এখন টেবিলে পরবর্তী কাজ।


Wednesday 27 December 2017

গল্প

আন্তরিক ধন্যবাদ বন্ধু ।

আন্তরিক

Good Good tgy 
 ছায়া চিত্র


সোমনাথকে চিনতাম । খুব সুন্দর গান গাইত। একেবারে সাদাসিধে খোলামেলা মানুষ ছিল। তারপর সে কোথায় যেন চলে যায়। শহরের উপকণ্ঠে একটা ভাড়াবাড়িতে থাকি। মধ্যবিত্ত ছাপোষা মনের মানুষ আমি। ছোটখাটো একটা চাকুরি করি। তবে গানবাজনা ভালবাসি। ভালবাসি আমার ভাড়াবাড়িতে উঠোনের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাদার গাছটি। অকারণে অনেক কিছু ভালবাসি।" সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে" পংক্তিটি বুকে জড়িয়ে ধরি মাঝেমাঝে। মাঝেমাঝে সোমনাথকে মনে পড়ে। আমার মানুষ হিসেবে তেমন কোনো মূল্য নেই। ধ্রুবতারার মতো জীবন আমার। রোজ উঠি, রোজ ঘুমোতে যাই। দুহাত বাড়িয়ে জীবনটাকে আঁকড়ে ধরতে চাই। জীবন ছেড়েছুঁড়ে যায়। রোদ্দুর হয়ে বাঁচতে চাই। চড়ুই পাখির মত ছোট্ট আমার এই জীবনটাকে ঈপ্সিতা ভালোবাসে। আমার এই ছোট্ট ভাড়াবাড়িতে তার চঞ্চল আনাগোনা একমুঠো সোনালী রোদ্দুর যেন। যখন সে আসে শালিকেরা তাদের ডানায় খুশির খবর পৌঁছে দিতে আমার আঙ্গিনায় আসে। চড়ুই পাখি একটি একটি করে খড়কুটো জড়ো করে নিজেদের ঘর তৈরি করতে শুরু করে। ঈপ্সিতা খুব ভালো গান গায়। আর আমি ঈপ্সিতাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখি।
      পথঘাট জুড়ে মেঘলা দুপুর নেমেছে সেদিন। একটি লোক ওদিক থেকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। লোকটি কাছে আসতেই মনে হলো এ সোমনাথ। অনেকদিন পর দেখা। এবার আমি ঈপ্সিতাকে দেখতে পেলাম। সোমনাথের ঠিক পাশে। সেদিন রোদ্দুর ছিল না। ওরা দুজন ওপাশে আর আমি এপাশে একা দাঁড়িয়ে ছিলাম।আর সত্যিই যখন পেছন ফিরে  তাকালাম দেখলাম আমার রোদ্দুর হীন ভিজে ছায়াটি অবহেলায় কাত হয়ে একপাশে পড়ে আছে।